ভারতের অর্থায়নে চট্টগ্রামে নলেজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ হাইটেক র্পাক কর্তৃপক্ষের অধীনে চট্টগ্রামে নলেজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। রোববার (২৭ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যৌথভাবে এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
চট্টগ্রামের আইটি পার্কটি প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের ভারত সরকারের রেয়াতি লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) এর অধীনে বাংলাদেশের ১২টি জেলায় আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপনের প্রকল্পের অংশ।
হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা তার বক্তব্যে আইসিটি সেক্টরে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতায় প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং আশা করেন যে এটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। প্রকল্পটি ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
হাইকমিশনার ভার্মা আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে, এই আইটি পার্কগুলি মান প্রতিষ্ঠা, হাব এবং ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি, উদ্যোক্তা বিকাশ এবং নতুন ও উদীয়মান প্রযুক্তিতে সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করে বাংলাদেশে আইটি শিল্প এবং আইটি-সক্ষম পরিসেবার প্রচারে ভূমিকা রাখবে। ইন্টারনেট অফ থিংস, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বর্ধিত বাস্তবতা এবং অন্যান্য উন্নত এবং অত্যাধুনিক বিষয়। তিনি যোগ করেছেন যে, আইটি পার্কগুলি একটি প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনশক্তিকে লালন-পালন করবে যা ২১ শতকে আমাদের অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পার্ক ৩ হাজার লোকের জন্য সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং প্রতি বছর এক হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পার্কগুলি থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সুবিধাগুলি তাই রূপান্তরমূলক হবে৷ এটাও উল্লেখযোগ্য যে এই প্রকল্পে গ্রিন বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে, যা শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব।
বাণিজ্য এবং পরিবহন সংযোগ এবং শক্তি সংযোগের বাইরে গিয়ে, ডিজিটাল সংযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের একটি দ্রুত উদীয়মান মাত্রা। এই প্রেক্ষাপটে, হাইকমিশনার ভারত ও বাংলাদেশের স্টার্টআপ সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করতে সম্প্রতি চালু হওয়া ভারত-বাংলাদেশ স্টার্টআপ সেতুর মতো নতুন উদ্যোগের পাশাপাশি দুই দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে সংযুক্ত করার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে চুয়েটে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক পূর্নাঙ্গ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর মাত্র এক বছরেই সেখানে বেশ কিছু আইটি প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপকে স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে সিংগাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পূর্ণদ্যোমে চলছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নাই। সরকার এজন্যই একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছে। এখন থেকে আর চাকুরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকুরি দিবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে আইসিটি বিভাগ থেকে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম ডিজিটাল সিটি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে আমারা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে বর্তমানে সারা দেশে সরাকারি উদ্যোগে ৯২টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে ১১টি পার্ক স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে যেখানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত হয়েছে আরো ১৭টি পার্ক।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং আইটি পেশাজীবী, নারী উদ্যোক্তা, গণমাধ্যমকর্মী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও চর রাঙ্গামাটিয়া মৌজায় সিডিএ’র ৯.৫৫১ একর জমির উপর এই র্পাক গড়ে তোলা হবে। ১৭৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে স্টলি স্ট্রাকচারে নির্মিত একটি ৫ তলা বিশিষ্ট মাল্টিটেনেন্ট ভবন। চারদিকে থাকবে সীমানা দেয়াল। গেইট হাউজ এবং অভ্যন্তরীন সড়ক নির্মাণ। অভ্যন্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ওয়াকওয়ে। নলকূপ স্থাপন এবং অভ্যন্তরীন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ইলক্ট্রেোমেকানিক্যাল ওর্য়াকস। কর্মাশয়িাল স্পেস, স্টার্টআপ ফ্লোর, প্লাগ এন্ড প্লে ফ্যাসিলিটিজ এবং বিশেষায়িত ল্যাব। এখানে প্রতি বছর ৩ হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। র্কমসংস্থান হবে এক হাজারের। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিলে অনুমোদন হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন র্পযন্ত। বাংলাদশে হাইটেক র্পাক র্কতৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ হাইটেক র্পাক কর্তৃপক্ষের অধীনে ‘জেলা র্পযায়ে আইটি/হাইটেক র্পাক স্থাপন (১২টি জেলায়)’ করা হচ্ছে। এই র্পাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনী র্কাযক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। থাকবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষায়িত ল্যাব। একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গবেষণার জন্য পৃথকভাবে ইনক্লুসিভ রিসার্চ ফ্যাসিলিটি স্থাপনের মাধ্যমে এখানে একটি ইনোভেশন কালচার সৃষ্টি করা হবে। ন্যাশনাল ও গ্লোবাল স্টকেহোল্ডারদের সাথে এই নলেজ পার্কের র্স্টাট-আপ এবং স্টেক হোল্ডারদের কোলাবোরেশন সৃষ্টি করা হবে।
বিপি