ইসকন শ্রীকৃষ্ণ মন্দির নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে রাজপথে নামার ঘোষণা সাধু-সন্ন্যাসীদের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১; সময়: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ |

প্রবর্তক সংঘের কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি কর্তৃক ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যাচার, ইসকন সাধু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মন্দিরের পবিত্রতা বিনষ্টের জন্য পরিকল্পিতভাবে মন্দির এলাকায় আনসার মোতায়নের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইসকন। শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বৈদিক ঋষিজ পরম্পরার মৌলিক ভাবাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে হরিনাম সংকীর্তন প্রচারের মাধ্যমে সনাতনী কৃষ্টি ও সংস্কৃতি প্রসার করে চলেছে। ধর্মীয় পূজার্চনাসহ সনাতন ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি ইসকন বিশ^জুড়ে বিভিন্ন দুর্যোগে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী, গরীব-দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ মানবিক বিপর্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মানবকল্যাণ, জলবায়ু পরিবর্তন, ধুমপান বর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসকন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পাশাপাশি বিশে^র অনেক রাষ্ট্রনেতার ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছে।

তিনি বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রবর্তক সংঘের শ্রীকৃষ্ণ মন্দির পাহাড়টি কালের পরিক্রমায় যখন বেদখল হয়ে যাচ্ছিল তখন ২০০৩ সালে প্রবর্তক সংঘের অনুরোধেই মন্দিরের দায়িত্ব নেয় ইসকন। উভয় পক্ষের মধ্যে একটি আপদকালীন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও প্রবর্তক সংঘ মন্দিরের কার্যক্রমকে প্রসারিত ও বেগবান করার জন্য কয়েক ধাপে মন্দির সংলগ্ন আরো অনেক জায়গা ইসকনকে অর্পন করার মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ মন্দির প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য মৌখিক ও লিখিত অনুরোধ জানান। কারণ, প্রবর্তক সংঘ প্রতিষ্ঠার মৌলিক উদ্দেশ্য- সনাতন ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য আশ্রম, মন্দির, সাধুনিবাস, অতিথি ভবন, প্রসাদালয় গড়ে তোলাসহ বিশ^ব্যাপী ধর্ম প্রচারের মূল উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন করতে প্রবর্তক সংঘ পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ইসকন ভক্তবৃন্দ বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের মার্বেল পাথরের মন্দির নির্মাণসহ আশ্রমিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করেছে। শ্রীকৃষ্ণ মন্দির উন্নয়ন প্রকল্পের শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মন্দিরের সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজে প্রবর্তক সংঘের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি শ্রীমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রবর্তক সংঘ গভর্ণিং বডির মুষ্ঠিমেয় সদস্য তাহাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে চরম প্রতিহিংসা পরায়ণ ও ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্নভাবে মন্দিরের সুনাম ক্ষুন্ন করা সহ সাধু সন্ন্যাসীদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী নামে আখ্যায়িত করে সমগ্র সনাতনী সমাজের বিরুদ্ধে চরমভাবে ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে এবং অদ্যাবধি অব্যাহত রেখেছে। অনাথদের জন্য বহু আয়বর্ধক প্রকল্প প্রবর্তক সংঘ গ্রহণ করলেও কপট অনাথদের কারণে প্রকৃত অনাথরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মন্দিরের পাথর অন্যায়ভাবে বিক্রি হয়েছে মর্মে প্রবর্তক সংঘের দাবি প্রসঙ্গে ইসকনের বিভাগীয় সম্পাদক বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনাক্রমে চট্টগ্রামের মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে ২ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পাথরগুলো মন্দিরে শতভাগ ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে প্রত্যায়িত করেন। এ পাথরগুলো ভারত থেকে দান হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রবর্তক সংঘের ঐ সমস্ত লোভী ব্যক্তিরা এ সামান্য বিষয়গুলোও খবর রাখতেন না। কারণ যে অনৈতিক ও অন্যায় কাজে নিজেরা সব সময় ব্যস্ত যেমন- অর্থ আত্মসাৎ, সংঘের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দেয়া, সংঘের সম্পত্তিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে ভোগ দখল করা, পেশি শক্তি প্রদর্শন করে বছরের পর বছর একই কমিটিতে বহাল থাকা ইত্যাদি তারা মনে করেন একই কাজে জগত সংসারের সকল মানুষই তাদের মতো ব্যস্ত থাকেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবর্তক সংঘের কুচক্রী মহলটি ইসকনের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের নিমিত্তে আইনী নোটিশ প্রদান করলে ইসকনও আইনীভাবে তার জবাব দিয়েছে। সুতরাং ইসকন ও প্রবর্তক সংঘ ইস্যুতে বর্তমানে আইনী প্রক্রিয়া চলমান, যাহা প্রবর্তক সংঘের আইনী নোটিশের বিষয় বস্তু থেকে সুস্পষ্ট হয়। এমতাবস্থায় ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধপূর্ণ জায়গায় বিরোধীয় পক্ষের আবেদনক্রমে আনসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত বেআইনী ও অযৌক্তিক। প্রকৃত সত্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে আনসার সদস্যদের সামনে রেখে প্রশাসনকে ইসকনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে শ্রীকৃষ্ণ মন্দির প্রবর্তক সংঘের নিয়ন্ত্রনে আনার যে জঘন্য ও হীনমনস্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তাহা কোনভাবেই কাম্য নয়। আনসার সদস্যদের ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ সাধারণ হিন্দুদের সাথে আনসার সদস্যদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে প্রবর্তক সংঘের হীনমনস্ক ব্যক্তিরা দেশের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে আমরা আশংকা করছি।

মিথ্যা মামলা দিয়ে ইসকনের সাধুদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সময়ে সাধু সন্ন্যাসীদের ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকার কথা সে সময়ে সাধুদের কে আদালতে, থানায়, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে। একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে ইসকন সাধু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে। প্রবর্তক সংঘের স্বার্থপর গোষ্ঠিটি ইতোপূর্বে ইসকন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় ষড়যন্ত্র চালিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও কি প্রকারের ষড়যন্ত্র করতে পারে তা ইসকন কর্তৃপক্ষের চিন্তাচেতনার বাইরে। প্রবর্তক সংঘের লোভী ও কপট ব্যক্তিদের ধারাবাহিক মিথ্যাচার ও উৎখাতের ষড়যন্ত্র ইসকনের আদর্শের অনুসারী সাধারণ সনাতনী জনসমাজের মনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রবর্তক সংঘের শঠ ব্যক্তিদের অপকর্মের বিরুদ্ধে জনরোষ প্রশমন করা অত্যন্ত দুরুহ কার্য হয়ে পড়বে। তাই সাম্প্রদায়িক ও আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে প্রবর্তক সংঘের অর্থ ও সম্পত্তিলোভী ব্যক্তিদের বেআইনী কর্মকান্ডের গতি রোধ করা একান্ত আবশ্যক। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগীতার পাশাপাশি আপনাদের কলমীযুদ্ধ অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকন নোয়াখালীর অধ্যক্ষ রসপ্রিয় গৌর দাস অধিকারী, ইসকন প্রবর্তকের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কক্সবাজার ইসকনের অধ্যক্ষ রাধা গৌবিন্দ দাস ব্রহ্মচারী, ফেনি ইসকনের অধ্যক্ষ নিতাই গৌরাঙ্গ দাস অধিকারী, কুমিলা ইসকনের অধ্যক্ষ সুদর্শন জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন বান্দরবানের অধ্যক্ষ উজ্জ্বলবর্ণ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন নন্দনকানন রাধা মাধম মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারননিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন মোহরা মন্দিরের ধ্যক্ষ সর্বমঙ্গল দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন রাঙামাটির অধ্যক্ষ নিতাই নুপুর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে