স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে: রাষ্ট্রপতি

শনিবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে।’

‘নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। ’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক।মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা। ’

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ’

‘বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন মহামৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যু তাঁকে নিঃশেষ করেননি বরং বাঙালির চিত্তাকাশে আরও উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে। ’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে, আজ তারা যে পথটি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তাঁর দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান। ’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আমাদের অর্জন প্রশংসনীয়। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। ’

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারসহ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

দেশে এবং প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশি নাগরিককে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বধানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণসহ মুক্তিযুদ্ধে যারা বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন তাদের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।

বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ’

‘দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার কমছে। এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। ’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে যা গোটা বিশ্বে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণার ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নিমার্ণাধীন পদ্মাসেতু এবছরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।