তথ্য বিবেচনায় একাত্তরের ঘটনা গণহত্যারই সামিলঃ এজেএআর প্রধান প্যাট্রিক বার্জেস

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩; সময়: ৮:২৯ অপরাহ্ণ |

“যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর বর্তমান শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি লাভ কঠিন হয়ে পড়েছে।”

রাজধানীতে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা পর্বের এক ফাঁকে এমনই মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, শাহরিয়ার আলম।

তিনি জানান, গণহত্যার এত বছর পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে ব্যর্থ। এর পেছনে দায়ী হলো পাকিস্তানের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর শক্তিশালী অবস্থান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক রাষ্ট্রই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছিল। ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে এর মধ্যে অনেক রাষ্ট্রই এখন বিশ্বে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তারা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন জানালেও তা কেবল মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা, এশিয়া জাস্টিস এন্ড রাইটস (এজেএআর) এর প্রেসিডেন্ট, ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্জেস বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম রক্তপাতের ঘটনাকেও পূর্বে গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিই কেন এমন বিরূপ আচরণ করা হচ্ছে এ ব্যাপারটি তিনি বুঝতে পারছেন না।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাঙালিদের উপর পাকিস্তানিদের নৃশংসতার শুরু, যা প্রায় দীর্ঘ নয় মাস যাবত চলে। এ সময়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ বাংলাদেশি পাকিস্তানিদের নৃশংসতার শিকার হন এবং দুই লক্ষ মা-বোনদের বর্বর পাকিস্তানিদের হাতে হারাতে হয় নিজেদের সম্ভ্রম।

যখন আপনার সামনে আপনার মা-বোনকে ধর্ষণ করা হবে কিংবা নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আপনার সন্তানকে, তখন এসব অতীতের স্মৃতি ভুলে আপনার পক্ষে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা কি খুব সহজ হবে? এত বছর পর এসেও তাই বাঙালিরা আজও তাদের সেই ক্ষতপূরণ করতে পারেনি।

তাছাড়া সমস্ত তথ্য বিবেচনা করলে একাত্তরের ঘটনা গণহত্যারই সামিল। এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন প্যাট্রিক বার্জেস।

পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়েই তিনি পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত, মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

উক্ত বৈঠকে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তার কার্যক্রম, নৃশংসতার শিকার হওয়া মানুষদের সাথে তিনি কিভাবে কথাবার্তা বলেছেন এবং গণহত্যার স্বীকৃতি লাভের জন্য তার পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বার্জেস।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরুণ, শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের এ গণহত্যার কথাই নয়, বরং রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ কেবল গণহত্যার শিকারই নয়, বরং গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয়দাতা।

তাছাড়াও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে তাদের ন্যায়বিচার প্রদানের সম্ভাব্য উপায় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।

আগামী ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গণহত্যা নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপনের কথাও রয়েছে তার।

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে