চট্টগ্রামে নৌকা পেয়েও চিন্তিত মাঝিরা!

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৩; সময়: ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ |

নৌকা পেলেই বিজয়ী এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে এবার আওয়ামী রীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বলেছেন। আর এর ফলে প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়েছেন মনোনয়ন ফরম। যারা নৌকার প্রার্থীর চেয়েও জনপ্রিয় নিজ এলাকায়। ফলে নৌকা পেয়েও চিন্তিত চট্টগ্রামের নৌকার মাঝিরা।

গত রবিবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে দুটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যরা এবার নৌকা প্রতীক পাননি। নৌকা প্রতীক না পেয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক, চসিকের একাধিক কাউন্সিলর, দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নৌকাপ্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। তবে সেই আসনে নর্বিাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো.গিয়াস উদ্দিন। গিয়াস উদ্দিনের জনপ্রিয়তা রয়েছে মিরসরাইয়ে। এছাড়া মোশাররফ বিরোধী আরেকটি গ্রুপ যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এলিট, সেই গ্রুপও গিয়াস উদ্দিনকে সমর্থন দিবে। ফলে অন্য রকম হিসাব-নিকাশ হবে এই আসনে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খদিজাতুল আনোয়ার সনি। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়ব ও সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান। ইতিমধ্যে আবু তৈয়ব উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। তাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ-বায়েজিদ আংশিক) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী ছিলেন। এ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এছাড়া এই আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী রীগের উপ কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। সাবেক মেয়র মনজুর আলম মঞ্জুও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছেন। এছাড়াও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন কাউন্সিলর ও চসিকের প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ এম এ লতিফ। কিন্তু আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করা এবং নানা কারণে সমালোচিত এম এ লতিফকে এবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। ইতিমধ্যে সভা ডেকে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার নৌকা প্রতীক পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। দলীয় প্রতীক না পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন হেভিওয়েট প্রার্থী সামশুল হক। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন তিনি। জব্বার ও তার ভাই আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন ব্যবসায়ী এমএ মোতালেব। দলীয় প্রতীক না পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনার ঝড় তোলেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার প্রার্থিতা পরিবর্তনের আশায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন ও উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুজিবুর রহমান ও আবদুল্লাহ কবির। দু’জনই নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে