কেরানি তৈরির বিদ্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: শিক্ষা উপমন্ত্রী
‘চাকরি আমাদের কাছে আসবে না। আমাদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েই চাকরি নিতে হবে৷ তাই বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।’শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রোববার (২৭ মার্চ) সকাল ১১টায় সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরে আয়োজিত দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রায়োগিক দক্ষতার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ঘাটতি আছে।
সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আমি উচ্চশিক্ষা নিয়েছি কোনো কিছু উপস্থাপন করতে পারি না, যোগাযোগ করতে পারি না, বাংলা ভাষাতেই আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, ইংরেজি তো অনেক দূরের কথা।
আমি উচ্চশিক্ষা নিয়েছি ভাষা জানি একটাই। আপনার মনোজগতে সুবিশাল পরিবর্তন আনতে হবে। যদি আমরা পরিবর্তন আনতে চাই তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনটাকে আমাদের ধারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে এখন শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। এ শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পরিশোধ করতে হচ্ছে দক্ষ জনশক্তিকে যারা বিদেশ থেকে এসে চাকরি করছেন। আমাদের আত্ম সমালোচনা ও আত্ম উপলব্ধি করতে হবে। সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির যারা আছেন তারা অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তারা কিন্তু কর্মদাতা। তারা কেন বিদেশ থেকে দক্ষ ম্যানেজার, দক্ষ টেকনিশিয়ান, দক্ষ ব্যবস্থাপক আনছেন। আমাদের সন্তানেরা কেন এসব জায়গায় কাজ করতে পারছেন না? এটাই শিক্ষার্থী হিসেবে আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ কোনো কর্মদাতা সার্টিফিকেট দেখে এখন আর কর্ম দিতে আগ্রহী নন। সার্টিফিকেট একজন শিক্ষার্থীর শুধু একটা স্বীকৃতি। কিন্তু আদৌ আপনি দক্ষ কিনা। সেটা আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। উচ্চশিক্ষা ছাড়াও পৃথিবীতে অনেক উচ্চমার্গীয় বিজ্ঞানী ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিলেই যে আমার কর্মসংস্থান হবে এই মানসিকতা থেকে আপনাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নওফেল বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় আছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় আছে। কিন্তু আমার বৃহৎ অর্থনীতিতে সেখানে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতদের কর্ম সৃষ্টি হচ্ছে কিনা? সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সৃষ্টি হয় না। সুতরাং আমার কী গতি হবে। আমার কর্মসংস্থান কোথায় হবে? আর আমাদের দেশে বিএ পাস না করলে বিয়ে হয় না। সার্টিফিকেট নেবেন, কিন্তু এখানে সার্টিফিকেটের চেয়ে কাজের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, বাবারা কেরানি তৈরির বিদ্যা থেকে বেরিয়ে আসো। হাতে-কলমে বাস্তবিক, প্রায়োগিক শিক্ষার জন্য মাঠে ময়দানে নামতেই হবে।
শুধু জ্ঞান অর্জন করার জন্য শিক্ষা এটির সঙ্গে কর্মস্থানের কোনো সম্পর্ক নাই। নতুন করে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। জীবন থেকে শিখতে হবে। লাইফ লং লার্নিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে ৬ লাখ ফ্রিলান্সার তৈরি হয়েছে। আমরা উন্নত সার্টিফিকেটধারী বেকারে পরিণত হতে চাই না। আমরা নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিতে চাই। নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান সরকার বিগত এক যুগ ধরেই উচ্চশিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চশিক্ষার বিকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তারই সুযোগ্য কন্যা দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অগ্রগতিকে শক্তিশালী করে চলেছেন। সব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির প্রতি তাঁর মনোনিবেশ প্রশংসনীয়।
মন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে যার মাধ্যমে সরকার উচ্চশিক্ষাকে দেশবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, অধিকতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার উচ্চশিক্ষার পরিধিকে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাবে।