জহুর হকার্স মার্কেট: গঠনতন্ত্র না মেনে কমিটি গঠনের তোড়জোড়
নগরীর পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে গঠনতন্ত্র অমান্য করে সিলেকশন পদ্ধতিতে কমিটির গঠনের তোড়জোড় চলছে। একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগে এমনটিই জানা গেছে। অভিযোগের তীর মূলত সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের দিকেই।
অভিযোগে জানা গেছে, জহুর হকার্স মার্কেটে গত ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কমিটিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আজীবন সভাপতি হন। এছাড়া মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপক্ষ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবুল কাশেম প্রকাশ কাশেম চেয়ারম্যান।
গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মার্কেটের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রয়াত হন। এরপরে আর কেউ সভাপতির স্থলাভিষিক্ত হননি, শুধু তাই নয় এমনকি নবায়ন না করার কারণে সংগঠনের নিবন্ধনও বাতিলের পর্যায়ে ছিল। পরবর্তীতে গত বছরের মাঝামাঝিতে সংগঠনের নিবন্ধন নবায়ন করার পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেন তৎকালীন সহ সম্পাদক মো: জালাল উদ্দিনসহ কমিটির একাংশ।
সেই সময় কমিটির সিদ্ধান্ত মতে, প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী কিংবা পুত্রকে আজীবন সভাপতি করে বাকিদের প্রতিদ্বন্দিতার মাধ্যমে নির্বাচিত করার প্রস্তাব হয়। তবে সেই সময় মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিবারের কাউকে সভাপতি করা বিষয়ে প্রথম থেকেই বেঁকে বসেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও তার সমর্থিত কমিটির সদস্যরা।
পরবর্তীতে গত বছরের ২৫ আগস্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কমিটির ১০ জন সদস্য স্বাক্ষর করে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, জহুর হকার্স মার্কেটে গত ২০১৩ সালে দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমকে বারবার অনুরোধ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পেশ করার জন্য জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে নোটিশ জারি করা হয়। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বক্তব্য পেশ করার নির্ধারিত দিনে সেই সময়ের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম কিংবা তার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। পরবর্তীতে ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজ সেবা কার্যালয়।
তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত শহর সমাজসেবা অফিসার যোবায়ের আলমের অভিযোগের সত্যতা পান এবং তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। পরবর্তীতে সমাজ সেবা কার্যালয় গত বছরের ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা অফিসার অভিজিৎ সাহাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে এবং পূর্ববর্তী মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসার যোবায়ের আলম ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসার সোহানুর মোস্তফা শাহরিয়ার।
পরে আহ্বায়ক কমিটির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম চট্টগ্রামের প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা এখনো বিচারাধীন। মামলার নম্বর-৭১/২০।
এদিকে ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মামলা চলা অবস্থায় গঠনতন্ত্র না মেনে সিলেকশন পদ্ধতিতে নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে।
জানতে চাইলে আবুল কাশেমের মোবাইলে একাধিক বার কল দিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে তার সমর্থিত সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মো. হোসাইন বাবুল বলেন, জহুর হকার্স মার্কেটের কমিটি নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলছে। নির্বাচনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সমাজ সেবা কার্যালয়ের। সুতরাং এখানে গঠনতন্ত্রের বইরে কেউ কিছু করছে না। গঠনতন্ত্রের বাইরে কিছু করার তো আর সুযোগ নেই।
জহুর হকার্স মার্কেটের সিনিয়র ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক বলেন, আমরা মার্কেটের দোকান মালিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ভোট চাই। এটি আমাদের দাবি। নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি নির্বাচিত হবেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাবো। গঠনতন্ত্রের বাইরে কোনো সিলেকশন কমিটি আমরা মানবো না।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম দস্তগীর ফারুকী বলেন, মার্কেটে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সাহেব মামলা দিলেন। ওই মামলা এখনো আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি হয়নি, এখন শোনা যাচ্ছে, ওনি সিলেকশন পদ্ধতিতে কমিটি ঘোষণা করতে চান।
জানতে চাইলে জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা অফিসার অভিজিৎ সাহা বলেন, জহুর হকার্স মার্কেটে গঠনতন্ত্রের বাইরে কমিটি গঠনের কোনো সুযোগ নেই। কমিটি নিয়ে মার্কেটের সাবেক সাধারণ আবুল কাশেম বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা করেছেন। আগে মামলাটি নিস্পত্তি হোক, পরে আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।