নৌকায় চড়ে জনপ্রতিনিধি জামায়াত-বিএনপি

প্রকাশিত: মে ৩, ২০১৮; সময়: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ |

প্রায় ২০০ বছরের স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয় ২০১৫ সালে। ওই বছর অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধন আইন, ২০১৫ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। পরে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। এর পরই নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধির খসড়া অনুমোদন করে নির্বাচন কমিশন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় ধাপে দেশের তিন হাজার ২২৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৪ জুন পর্যন্ত নির্বাচন হয় তিন হাজার ১২৫টিতে। গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১০৩টিতে নির্বাচন হয় পরে। দেশের মোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজার ৫৫৩টি। মামলা, সীমানা জটিলতাসহ নানা কারণে ওই ছয় ধাপে এক হাজার ৩২৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হতে পারেনি। ওই সময় রাজনৈতিক ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা প্রার্থীরা। ছয় ধাপের ওই নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন দুই হাজার ৬৭০টি ইউনিয়ন পরিষদে। ৮৫ শতাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ রয়েছে জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া।

ওই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অন্য দলগুলোর নামকাওয়াস্তে অংশগ্রহণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ছিল একচেটিয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানেই ছিল নিশ্চিত বিজয়। কিন্তু ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ, ত্যাগী, বিভিন্ন সময় হামলা-মামলা, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার কর্মীদের বঞ্চিত করে বিএনপি-জামায়াতসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দলে এনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া দেড় শতাধিক প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।

ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের রয়েছে একটি স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। এই বোর্ডই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা প্রাথমিকভাবে তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে জমা দেন। কেন্দ্র ওই তিনজনের মধ্যে একজনকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যাপকভাবে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বনাম এমপি লীগে বিভক্তি তৈরি হয়। যে বিভক্তি এখনো বিদ্যমান।

বেশির ভাগ উপজেলায় এমপিরা প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের পছন্দের লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তিনজন করে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর কথা থাকলেও অনেক ইউনিয়নে মাত্র একজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা লোকদের নাম। এসব নামের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে বিপুল পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছয় ধাপের নির্বাচনে দুই হাজারের বেশি অভিযোগ কেন্দ্রে জমা পড়ে। সর্বাধিক অভিযোগ জমা পড়ে পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, কক্সবাজারের মহেশখালী ও খুলনা এলাকা থেকে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলাধীন মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মৃধা, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল ওহাব মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন হাওলাদার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ করেন। মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ইউনিয়ন কমিটিকে বাদ দিয়ে একজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে বিএনপির জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে একক প্রার্থী করে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়। কেন্দ্র এ অভিযোগ আমলে নিয়ে আলমগীর হোসেনকে মনোনয়ন দেয়নি। অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে রাজাকারের সন্তান গাজী শওকত হোসেনকে একক প্রার্থী করে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়। তৃণমূলের আটজন নেতা তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীরা বলেন, গাজী শওকত হোসেনের বাবা ১৯৭১ সালে রাজাকার ছিলেন। কিন্তু এই অভিযোগ আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং তিনি নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এলাকার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মুরাদ। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকের চেয়েও কম ভোট পান পরাজিত বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম। গত জানুয়ারি মাসে মারা যান রফিকুল ইসলাম মুরাদ। মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদে লড়ার প্রস্তুতি নেন তাঁর স্ত্রী সামিয়া। কিন্তু চোখের সামনে ইউনিয়নবাসী দেখল মুরাদের স্ত্রীকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপির সেই পরাজিত প্রার্থী আবুল কালামকে। পরে তিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

মুরাদের স্ত্রী সামিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমপির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কোনো কথাই শুনতে চাননি।’

নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে দলে এনে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল আজিজকে টেকনাফের বাহারছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়া হয়।

আর নির্বাচনের এক মাস আগে দলে এনে চকরিয়ার কোটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি নেতা বাহাদুর আলমকে।

ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা, রামু উপজেলার গর্জনীয়া ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জামায়াত নেতা সিরাজউদ্দৌলার নাম কেন্দ্রে পাঠান কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। সিরাজউদ্দৌলার বড় ভাই শামসুল আলম কক্সবাজার শহর জামায়াতের সেক্রেটারি, আরেক বড় ভাই সৈয়দাদুল আলম কুতুবদিয়া উপজেলা জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য। ছোট ভাই বশির আলম উত্তর ধুরং ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ তাঁর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর পর স্থানীয় ত্যাগী আওয়ামী লীগকর্মীরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার গোচরে আনতে সমর্থ হয়। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকার এমপি ও তাঁর সমর্থকরা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শাহরিয়ার চৌধুরীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে এবং সমর্থন দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে দেন।

কুতুবদিয়ার খৈয়ারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয় একসময় উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাথি আলমগীর মাদবরকে।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয় উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক হাফিজুর রহমান লাবলুকে। নির্বাচনের এক মাস আগে তাঁকে দলে আনা হয়।

বারবার নির্বাচিত তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবু শহিদ মিয়াকে মনোনয়ন না দিয়ে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে দলে এনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় তালমা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি শাহ আলমকে। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পাস করেন আবু শহিদ মিয়া।

বিএনপি থেকে দলে এনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আলমগীর কবীরকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি এজাবুল হক বুলিকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জসিমউদ্দিনকে। নির্বাচনের এক মাস আগে তাঁকে দলে নেওয়া হয়। নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক পান গোবরাতলা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আসজাদুর রহমান।

২০১৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন রেজাউল করিম। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির একসময়ের সহসভাপতি রেজাউল করিম। তাঁকে বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়া হয়।

২০১৭ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া আহম্মদ মাস্টারকে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা আবদুস সালাম মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে শোকে-দুঃখে মারা যান।

বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক পান ফরিদ হোসেন বাবু। এখানে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইউনুসকে বাদ দিয়ে বাবুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি এলাকার শত শত সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল করে তাদের বাস্তুচ্যুত করেছেন।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিতে পাংশা উপজেলা ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠায় জজ আলীর নাম। সর্বহারা পার্টির শীর্ষ নেতা এই জজ আলী রাজবাড়ী জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ৯ নম্বর সন্ত্রাসী। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তাঁকে দলীয় মনোনয়ন না দিলেও পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের পরোক্ষ সমর্থনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।

পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত সরদারকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের ১০ দিন আগে দলে যোগ দেওয়া বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নে আওয়ামী পরিবারের সন্তান রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকবর আলী মর্জির ভাইপো মির্জা বদিউজ্জামান বাবুকে বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে ধার করে এনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেনকে।

রাজবাড়ী সদরের মিজানপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু শিকদারকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া রাজাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাগলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা গিয়াসপুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে। এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, শুধু বিত্তের কারণে ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ি ডোবরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় জামায়াতকর্মী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নির্বাচনী প্রচারক অলিউল্লাহকে।

জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান আনসারীকে। একই ইউনিয়নে আগেরবারও তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক সরদারকে দলীয় মনোনয়ন কিনতেই দেওয়া হয়নি।

ইসলামপুরের কুলকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জোবায়দুর রহমানকে নির্বাচনের আগে দলে এনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। কুলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জালাল আহমেদকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়।

ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, ‘আমাদের দলে যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে না, বিএনপি থেকে এমন লোক এনে নৌকা প্রতীকে জনপ্রতিনিধি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এখন দল আর দল নেই। এমপি মানেই দল।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়া হয় জামায়াত নেতা খায়রুল হককে।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাঁর বাবা ছিলেন শান্তি কমিটির নেতা। পরিবারের অন্যরা জড়িত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে।

টাঙ্গাইল জেলা পরিষদে সদস্য পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ঘাটাইলের শাহানশাহ মিন্টু। একসময় তিনি ছিলেন স্থানীয় জিয়া সংঘের সম্পাদক।

কাঁঠালিয়া আমুয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একসময়ের বিএনপি নেতা আমিরুল ইসলাম ফোরকান শিকদারকে। সৌজালিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা এম এ খালেককে বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে আসা মাহমুদ রিপনকে নৌকার প্রার্থী করা হয়।

কাঁঠালিয়ার চেছনিরামপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া জাকির হোসেন ফরাজীকে। বঞ্চিত হয়েছেন দলের ত্যাগী নেতা হারুনার রশিদ।

কাঁঠালিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ শিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ২৩ বছরের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। আর কাঁঠালিয়াতে ২০০৯ সালের পরের ইতিহাস হলো প্রকৃত বঙ্গবন্ধু সৈনিকদের বঞ্চনার ইতিহাস।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ইউনিয়নে বিএনপির নুরুল আমিনকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাস করিয়ে আনা হয়েছে।

সোনাইমুড়ির বারোগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আনিসুর রহমানকে। তিনি আওয়ামী লীগে নতুন মুখ। কিছুদিন আগেও তিনি এবং তাঁর গোটা পরিবার ছিল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ঝালকাঠির রাজাপুরের মঠবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তফা কামাল শিকদার। ২০০৯ সালে জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন রাজাপুর উপজেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রব হাওলাদার।

আবদুর রব হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সবাই জানে মোস্তফা রাজাপুর থানা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সভাপতি হন। নির্বাচনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।

সাতুরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ছিদ্দিকুর রহমান। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেন, তিনি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এই ইউনিয়নে স্বাধীনতার পর থেকে দলের হাল ধরে আছেন সোবহান খান। তিনি মনোনয়ন চেয়েও পাননি।

রাজাপুর সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা। তিনি একজন ঠিকাদার। একসময় করতেন বিএনপি। পরে যোগ দেন জেপিতে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই প্রথম দলীয় মনোনয়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। তৃণমূলে কোনো কোনো সুবিধাবাদি নেতা তাঁদের পছন্দের লোকদের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে কৌশল করেছেন। তার পরও কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নজরে এলে সঠিক লোককেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। হয়তো ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু প্রবেশ করে ফেলেছে।’

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে