পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের অভিভাবক হবেন মা
বাবার পরিচয়হীন সন্তানের অভিভাবক মা হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ একটি রিটের রায়ে একথা জানিয়েছেন।
এর আগে, ১৯ জানুয়ারি একই বেঞ্চ রায়ের জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটটির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার সিদ্দিকা, অ্যাডভোকেট এস এম রেজাউল করিম ও অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার; পক্ষান্তরে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
ওইদিন রিটের পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মা ও সন্তানকে কোনোরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবা চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর-স্নেহে বড় হয়েছেন।
পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন — বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ এবং বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থি ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে বর্তমানে কোন কোন শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা-মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হয়, তার একটি তালিকা এবং যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
পরে ২০২১ সালের ৬ জুন ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন।