আফগানিস্তান ত্যাগ করা আফগানদের কণ্ঠে হতাশা আর অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১; সময়: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ |

গত রবিবার তালেবানের কাছে কাবুলের পতনের পর তাৎক্ষণিক ও বিশৃঙ্খলভাবে আফগান নাগরিক ও সেখানে অবস্থানরত বিদেশিদের অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের একটি বড় অংশ আশ্রয় পেয়েছে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ কাতারে।

কাতারের রাজধানী দোহায় এক আফগান নারী রয়টার্সকে বলেন, “নিজের দেশ ছেড়ে আসাটা খুবই কঠিন ছিল। আমি দেশকে ভালোবাসি।”

তিনি জানান, তালেবান ক্ষমতা দখলের আগপর্যন্ত দেশ ছেড়ে তিনি কোথাও যাওয়ার কথা ভাবেননি।

ওই নারী জানান, স্বামীর সঙ্গে তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন, সঙ্গে তার তিন সন্তান। তার স্বামী পেশায় দন্তচিকিৎসক। তিনি শঙ্কিত ছিলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার কারণে তারা তালেবানের রোষে পড়তে পারেন।

কাবুল বিমানবন্দরের ভীতিকর চিত্রের বর্ণনা দেন তিনি; বলেন, কীভাবে হাজার হাজার মানুষ ফ্লাইটে ওঠার জন্য শোরগোল করছিল।

তিনি স্মরণ করেন, ঠেলাঠেলির এক পর্যায়ে যখন মানুষ বিমানবন্দরে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করছিল, তখন তার পাশে দাঁড়ানো একজনের পায়ে গুলি করে সামরিক বাহিনীর লোকেরা। এই ঘটনার সত্যতা নিরপেক্ষ উৎস থেকে নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।

“এটা ভীতিকর ছিল এবং আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত।”

আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনা যে কয়েকশ মানুষকে দোহায় সাময়িকভাবে একটি আবাসিক এলাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে তাদের একজন এই নারী। রয়টার্সের সাংবাদিক ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

কাতারের সরকার আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনা কয়েক হাজার লোককে সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তৃতীয় কোন দেশে যেতে পারছেন।

ওই আবাসিক এলাকায় অবস্থানকারী একজন পুরুষ বলেন, তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে আশা করেন না তিনি। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পরই আশ্বাস দিয়েছিল তারা শরিয়া আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে নারীর অধিকারকে সম্মান করবে এবং সরকারি কর্মী বা যারা বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করছিল তাদের জন্যও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তারা।

আফগানিস্তান থেকে স্ত্রী, তিন সন্তান, বাবা-মা ও দুই বোনকে নিয়ে এই সপ্তাহে দোহায় পৌঁছানো এই ব্যক্তি বলেন, “সবচেয়ে কষ্টের বিষয়টি হল ভবিষ্যতের জন্য খুব বেশি আশা করার কিছু নেই।”

পেশায় আইনজীবী এই পুরুষ বলেন, তার ভয় ছিল, যদি তিনি আফগানিস্তানে থাকেন, তাহলে তিনিও তালেবানের টার্গেটে পরিণত হবেন, কারণ তিনি আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করতেন।

তিনি বলেন, “আগামী দিনগুলোতে আমাদের জন্য একটি খুবই আলাদা ও সংকটপূর্ণ জীবন অপেক্ষা করছে।”

আরেক আফগান, যিনি বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কাবুল দখলের পর তালেবানের যোদ্ধাদের লুটতরাজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি দেখেছেন সশস্ত্র তালেবানরা বিমানবন্দর অভিমুখী লোকজনকে হয়রানি করছে।

নিজের বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাতারে পালিয়ে আসা এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এখন জানেন না কীভাবে তিনি পড়ালেখা শেষ করবেন। নিজের স্ত্রীকে দেশে ফেলে এসেছেন তিনি, দেশ ছাড়ার আগে যাকে তিনি বিয়ে করেন ভিডিও কলের মাধ্যমে।

“আমাদের মন দেশেই পড়ে আছে কারণ আমাদের পরিবার সেখানে আছে। আমার স্ত্রী সেখানে আছেন, আমার বাবা-মা, ভাই-বোনেরা। আমি শুধু আশা করছি তারাও যাতে বের হয়ে আসতে পারেন … যদি সেটা না হয় এবং পরিস্থিতি বদলে যায়, আমার ধারণা, আমি মনকে প্রস্তুত করব এবং দেশে ফিরে যাওয়ার আশা করব।”

সূত্র:রয়টার্স

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে