বঙ্গবন্ধু দেশকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ বানাতে চেয়েছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২; সময়: ৩:০০ অপরাহ্ণ |

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার মূল কারিগর হবেন নবীন সরকারি কর্মকর্তারা বলেও তিনি জানিয়েছেন।

সোমবার (২২ আগস্ট) বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

সাভারে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, এই ঘুনে ধরা সমাজ ভেঙে আমাদের নতুন সমাজ গড়তে হবে। উপনিবেশিক ভাবধারা বা প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে দেশে কোনোদিনও মুক্তি আসবে না। স্বাধীন দেশের উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা, চিন্তা ভাবনা সবকিছু তৈরি করতে হবে। তারই নেতৃত্বে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে যেমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলাম, পাশাপাশি একটি দেশ কীভাবে পরিচালিত কীভাবে হবে, তার জন্য মাত্র নয় মাসের মধ্যে আমাদের সংবিধান দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মৌলিক অধিকারের কথা সব কিছুই তিনি উল্লেখ করে গেছেন। মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো- অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তার দিকনির্দেশনাও তিনি দিয়ে গেছেন। যারা কর্মরত থাকবেন তাদের করণীয় কী সে নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন তিনি। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সবসময় বলতেন যে, বাংলাদেশকে তিনি ‘সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট’ হিসেবে তৈরি করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর থেকেই আমাদের সব প্রচেষ্টা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। পাকিস্তান আমলে যে বৈষম্য ছিল সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। আজকে যারা নবীন কর্মকর্তা আছেন তারা সব সময় এটা মনে রাখবেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আসছে। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ আমাদের। তাদের যেমন খাদ্য দিতে হবে পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। শিল্পায়ন আমাদের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য। অর্থনীতি, কৃষিকে যেমন আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে পাশাপাশি শিল্পায়নের দিকেও আমাদের যেতে হবে। আবার কৃষিপণ্য যেমন আমাদের খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে। যাতে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি। আবার রপ্তানি শুধু একমুখী হলে চলবে না, এটাকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করলে অবশ্যই আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারব।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের নবীন অফিসাররা আমার আগামী দিনের ৪১ এর মূল। ৪১ এ আমরা যে বাংলাদেশ গড়বো সেই বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করবেন আজকের এই নবীনরা। আমি প্ল্যান দিয়ে যাচ্ছি, কারণ আমার তো অনেক বয়স হয়েছে, ততদিন তো আর বেঁচে থাকবো না। কিন্তু যারা থাকবেন তারা যদি এই দিকটা অন্তরের সঙ্গে ধারণ করতে পারেন…, দেশটা আমাদের, এদেশের মাটি মানুষ আমাদের। তাদের কল্যাণে আমাদের কাজ করতে হবে। তারা ভালো থাকলে সবাই ভালো থাকবে। জীবনমান উন্নত হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকবে এবং বাংলাদেশে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। ৪১-এ থামলেই চলবে না, আমাদের অনেক কাজ এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। পাশাপাশি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান সেটাও কিন্তু দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই ব-দ্বীপ জলবায়ুর অভিঘাতে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ডেলটা প্ল্যান ২১০০ এটা যে প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম আমরা। আমরা চাই দেশের মানুষ উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন পাক।

লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের রেক্টর নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম আলী আজম।

অনুষ্ঠানে তিনজনকে প্রশিক্ষণ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। এরা হলেন মো. রায়হান আকবর, জুবাইদা ফেরদৌস ও আব্দুল্লাহ আল রাফি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরাদ হোসেন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে