বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ
মিডিয়া ডেলিগেশনের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন অপতৎপরতা ও গভীর ষড়যন্ত্রের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে যে, “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নতুন করে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন। মিডিয়া ডেলিগেশনের নামে জামাত-শিবিরের এজেন্টদের একটি টীমকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পাঠাবার পাঁয়তারা করছে ঢাকাস্থ পাকিস্তান মিশন। ইতিমধ্যে অনেক মিডিয়া হাউসে তারা যোগাযোগ শুরু করেছে। কেউ কেউ পাকিস্তান হাইকমিশনের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের এই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে নানান মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের বাংলাদেশ বিরোধী এধরনের ষড়যন্ত্রের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩০ লক্ষ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছিল। দুই লক্ষ বাঙালি নারীকে পরিকল্পিতভাবে গণধর্ষণ করেছিল। তারপরেও এদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তান আজও পর্যন্ত তার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চায়নি। বাংলাদেশ সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছিলো, তখনও পাকিস্তান বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ্য তার বিরোধিতা করেছিল; যা আসলে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন। পাকিস্তান বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাত ও নুরু গংকে অর্থায়ন, জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরী ও জাল মুদ্রার ব্যবসাতে নেপথ্যে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তান হাইকমিশনের বিরুদ্ধে। ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে বাংলাদেশ সরকারের চাপে ২০১৫ সালে পাকিস্তান দূতাবাসের এক কূটনীতিককেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। বাংলাদেশ থেকে মিডিয়া ডেলিগেশন নেয়ার নামে আবার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে পাকিস্তান। এই ডেলিগেশনকে পাকিস্তানে নিয়ে যেয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করার কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এধরনের তৎপরতা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতির পরিপন্থী। এছাড়াও গতবছর নভেম্বরে পাকিস্তান ক্রিকেটদল ঢাকায় খেলতে এসে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করে বাংলাদেশের পতাকা বিধি লঙ্ঘন করেছিল। আইসিসির নিয়মানুসারে কোনো ইভেন্ট কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ চলাকালীন দুই দেশের পতাকা উড়তেই পারে। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের অনুশীলনেই সেটা কেন উড়াতে হবে, তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিবাদের মুখে একপর্যায়ে পতাকাগুলা সরিয়ে ফেলা হয়। মিডিয়া ডেলিগেশনের নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
বাংলাদেশ সরকারের নিকট আহবান, অবিলম্বে পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্র মিডিয়া ডেলিগেশন দ্রুত বন্ধ করাসহ ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনকে তলব করে এবিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। অন্যথায় একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার দাবিতে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”