রথযাত্রায় ১ দিনের সরকারী ছুটিসহ নয় দফা দাবি ইসকনের
রথযাত্রায় ১ দিনের সরকারী ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামমৃত সংঘ (ইসকন)। মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে নয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, রথযাত্রায় এক দিনের সরকারী ছুটি ঘোষণা, সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ মঠ মন্দির সরকারী অর্থায়নে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনর্নিমাণ, দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও সংরক্ষণ, প্রতিটি উপজেলায় সরকারী অনুদানে কেন্দ্রিয়ভাবে মন্দির নির্মাণ, ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থানসমূহ রক্ষা ও সংরক্ষণ, সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে কঠোর আইন ও শাস্তি মৃত্যুদন্ড, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে হিন্দুদের হয়রানি বন্ধ ও জেলে থাকা নিরপরাধীদের নিশর্ত মুক্তি, হিন্দুদের টার্গেট করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধ ও শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
লিখিত বক্তব্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, রথযাত্রা মহোৎসব সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের জগন্নাথ পুরীতে রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় উদযাপিত হয়ে আসছে। ইসকন এর প্রতিষ্ঠাতা আর্চায কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ রথযাত্রা উৎসব সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত করেছেন।
তিনি বলেন, জাতিগত বিদ্বেষ, তথাকথিত ধর্মীয় উন্মাদনা, বর্ণবৈষম্য, অর্থনৈতিক আধিপত্য এমনকি যুদ্ধের হুমকি ইত্যাদির আবর্তে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠপ্রায়, তখনই রথযাত্রার মত অসাম্প্রদায়িক উৎসব সমগ্রবিশ্বের মানব সমাজে সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ স্থাপনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা স্থাপন করে চলেছে। ইসকন ফুড ফর লাইফের মাধ্যমে দুস্থদের আহারের ব্যবস্থা, ভক্তিবেদান্ত ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে সুশীল সমাজের মাঝে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার, ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্টের মাধ্যমে গ্রন্থ প্রকাশ ও জ্ঞান বিতরণ কর্মসূচী, বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প, সকলকে চরিত্রবান ও মাদকের ছোবল থেকে বাঁচাতে ইস্কন বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, আবহমান কাল ধরে এই বাংলায় রথযাত্রা একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এই উৎসবে বাংলার আপামর জনসাধারণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় যোগদান করে থাকেন। আগামী ১ জুলাই শুক্রবার বিকাল তিনটায় ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে প্রবর্তক মোড় থেকে ঐহিত্যবাহী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রথযাত্রায় চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে ১ জুলা থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত আটদিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ১ জুলাই বিকালে রথযাত্রার উদ্বোথন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এমপি। এছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, ভারতীয় দুতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার ডা.রাজীব রঞ্জন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এমএ সালামসহ অন্যরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ১ জুলাই রথযাত্রা প্রবর্তক থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাজারী গলি গিয়ে শেষ হবে এবং ৮ জুলাই ফিরতি রথ একইপথে হাজারীগলি থেকে প্রবর্তক আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারুব্রহ্ম দাস, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য রুপেশ্বর গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, দিব্যনিমাই দাস ব্রহ্মচারী, স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, পরমানন্দ নিতাই দাস ব্রহ্মচারী, নিত্য নারায়ণ দাস ব্রহ্মচারী, সুধামা গৌর দাস ব্রহ্মচারী, ইসকনের মিডিয়া সমন্বয়ক বিপ্লব পার্থ, সনাতনী জাগরণ সংঘের সভাপতি কাঞ্চন আচার্য্য, জাগো হিন্দু পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি রুবেল কান্তি দে, কিশোর শ্যাম দাস ব্রহ্মচারী, উজ্জ্বল নিলাম্বর দাস ব্রহ্মচারী, সুচারু কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, রাধাকান্ত কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, বিশ্বরুপ কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, প্রাণ গোপিনাথ দাস প্রমুখ।