সেনা পাহারায় বাসভবন ছাড়লেন শ্রীলঙ্কার প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষে
শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রতাপশালী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের তালিকায় নিশ্চিতভাবে নাম থাকবে সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের। একাধিকবার ক্ষমতায় থাকায় মাহিন্দার বিদায়টা হয়েছে নিতান্তই লজ্জার। গণবিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত তাঁকে সরকারি বাসভবন ছাড়তে হয়েছে সেনা পাহারায়। খবর এএফপির।
আজ মঙ্গলবার কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এর আগে হাজারো বিক্ষোভকারী বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা রাজধানীর ‘টেম্পল ট্রিজ’ বাসভবনের মূল দোতলা ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আটকা পড়েন।
শীর্ষস্থানীয় এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘ভোরের আলো ফোটার আগে এক অভিযানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কমপক্ষে ১০টি পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল।’
মাহিন্দা রাজাপক্ষকে অজ্ঞাতনামা স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগের দিন দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আইনপ্রণেতাও রয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের কবলে পড়ে তিনি নিজ গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিক্ষোভে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০০ জন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ ঠেকাতে তিনটি ফটকেই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলের ভবনটিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীক বিবেচনা করা হয়।
গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। এরই মধ্যে সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভে রাজাপক্ষের অনুগতদের কয়েক ডজন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামবানটোটায় রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
সোমবার নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর পরিবারের সমর্থকদের হামলায় উসকানি দেওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন বিক্ষোভকারী ও দেশটির ধর্মীয় নেতারা। এর জেরেই মূলত পাল্টা হামলা শুরু হয়।
করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।