‘আমেরিকা প্রবাসী নোটন শেফালি ঘোষের পরিবার নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে’
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীত শিল্পী শেফালি ঘোষের পরিবার নিয়ে মিথ্যাচার ও বসতঘর নিয়ে বিভ্রান্তি বন্ধের দাবি জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (২৫ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন শেফালি ঘোষের একমাত্র পুত্রবধু দীপান্বিতা মজুমদার।
সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শব্দ সৈনিক ননী গোপাল দত্ত ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালি ঘোষের বসতঘর ইসকনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই শেফালি ঘোষের পরিবার নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দীপান্বিতা মজুমদার বলেন, আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালি ঘোষের স্বামী ননী গোপাল দত্ত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। শেফালি ঘোষকে বিয়ে করার পূর্বে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। সেই ঘরের সন্তানরা অনেক বছর আগে ভারতে চলে যান। তারা ননী গোপাল দত্ত ও শেফালি ঘোষের কোন খবর রাখতেন না। শেফালি ঘোষের একমাত্র ছেলে সুকণ্ঠ দত্ত ও আমি তাদেরকে দেখাশুনা করতাম। কিন্তু ২০১৯ সালে শেফালি ঘোষের একমাত্র পুত্র ও আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমার শ্বশুর ননী গোপাল দত্ত নন্দনকানন সুধাংশু রঞ্জন পালের স্ত্রী ভগবতী পাল ও তার কন্যা ভারতী পালের ভাড়াটিয়া হিসেবে এখানে বসবাস করতো। এছাড়া আমার শ্বশুড় মালিক পক্ষের বরাবর মাসিক ভাড়া জমা দেওয়ার জন্য ঘরভাড়া মামলাও করেন । যার নম্বর ৬/১৯৯৮। আদালতের মাধ্যমে ভাড়াও দিতেন। এর আগে ১৯৮০ সালে অর্পণনামমূলে ভারতী পাল চৈতন্য কালচার সোসাইটিকে তাদের সম্পত্তি প্রদান করেন। ইসকন ও আমাদের মধ্যে সালিশীমান্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিনজনকে সালিশকারক মনোনীত করা হয়। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী গন সালিশকারক হিসেবে মনোনীত হন। সালিশকারকদের রায়ে বৈধ চুক্তির মাধ্যমে আমি ইসকনকে আমার স্বামীর সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করি। এছাড়া ইসকন থেকে আমার পাওনা বুঝিয়া নিই। এখানে ইসকন আমাকে জোর করে বা বাধ্য করে কোনকিছু করেননি। এছাড়া জোর করে আমাদের বসতঘরও দখল করেননি। আমি নিজে উপস্থিত থেকে তাদেরকে আমাদের বসতঘর হস্তান্তর করেছি। কথিত রতন বিশ্বাস গং লোকনাথ মন্দিরের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সৃজিত বিভিন্ন দলিলমূলে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিত্রার্থ করার কুমানসে আমার শ্বশুরের বসতঘর বৈধ প্রয়োজনে আইন প্রক্রিয়ায় অর্থের বিনিময়ে চৈতন্য কালচার সোসাইটির পক্ষে ইসকনকে হস্তান্তর করার কারণে ঈশ্বান্বিত, হিংসাপরায়ন ও নিজেদের জালজালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয় ভবিষ্যতে উৎঘাটিত হওয়ার আশঙ্কায় মিথ্যা ঘটনা অবতারণ করে ইসকনকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ আইন ও ন্যায় নীতির পরিপন্থি।
শেফালি ঘোষের একমাত্র পুত্রবধু বলেন, সুশান্ত দত্ত নোটন শেফালি ঘোষের অনেক সম্পদ আগে আত্মসাৎ করেছে এবং দেশের টাকা বিদেশে প্রাচার করেছে। কিছুদিন পূর্বে সুশান্ত দত্ত নোটন আমার নামে ও ইসকনের নামে বিভিন্ন মিথ্যাচার করেছে। শুনেছি তিনি ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন এবং সেই পাসপোর্টে আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। গত কিছুদিন পূর্বে নন্দনকানন লোকনাথ ধাম কমিটির কিছু ব্যক্তির ইন্দনে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন দপ্তরে ভুয়া চিঠিপত্র দেন এবং আদালতে মামলা করেন। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বর্ডার গার্ডস অব বাংলাদেশ, ইমিগ্রেশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রশ্ন অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মানুষজনকে হুমকি কিভাবে দেওয়া যায়। এছাড়া যে এদেশের নাগরিক নয় সে কিভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করে। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্টমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার অনুরোধ যারা শেফালি ঘোষের নাম ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে, অবৈধপথে বাংলাদেশে এসে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে তাদের এবং তাদের ইন্দনদাতা ও সহযোগীদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাহলে সত্য বেরিয়ে আসবে।
এ সময় শেফালি ঘোষের নাতি অরিন্দম দত্ত, নাতনি অদ্বিতীয়া দত্তসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।