ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবিতে চট্টগ্রামে প্রতিবাদ কর্মসূচি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও আলোচিত সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক-সুধিজন।
বুধবার (৮ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এই দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কালো আইনের ফলে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। আইনের অপপ্রয়োগের ফলে জনসাধারণ হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছে,শত শত লোক কারাবরণ করেছে।
মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, রাজনীতিবিদদের। সচেতন প্রতিবাদী মানুষদের মুখ বন্ধ করার জন্য সংবিধান পরিপন্থি এই আইন করা হয়েছে।
সাংবাদিক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টপ্রাম প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামের নগর সম্পাদক ইয়াছিন রানা সোহেল প্রমূখ।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিকর্মী অসীম বিকাশ, পুলক দেব দাশ, কবি সৈকত দে, যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার প্রকাশনা সম্পাদক রবি শংকর সেন নিশান, ছাত্র ইউনিয়ন রাঙ্গামাটি জেলার সাবেক সভাপতি অভিজিৎ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা মূলত লুটেরা-দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি-গোষ্ঠী ও সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষাকারী আইন। আইন একটি গণবিরোধী আইন, এই আইন দেশের সচেতন প্রতিবাদী মানুষকে কন্ঠরোধ করার আইন। দ্রুত এই আইন বাতিল করে, ফজলে এলাহীসহ সকলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বক্তারা।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এই আইন সংবাদমাধ্যমের কর্মকান্ডের ওপর নজরদারি, বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের সংবিধানপ্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এই আইনে সাংবাদিকতা, বিশেষত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই আইনে অস্পষ্টতা আছে এবং এতে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং সহজেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বক্তারা বলেন, রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও তার পরিবারের মুখোশ উন্মোচন করায় তারা সাহসী সাংবাদিক ফজলে এলাহীর ওপর ক্ষেপেছে। অথচ তার পত্রিকায় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তার প্রতিটি শব্দ সত্য ছিল। যা সরকারের একাধিক সংস্থার তদন্ত ওঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে ফজলে এলাহীকেও মামলা থেকে নির্দোষ প্রতিবেদন দিতে হবে। তারা আরও বলেন, রাঙামাটিতে মামলা করে সুবিধা করতে না পেরে গোপনে চট্টগ্রাম এসে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ তো ফজলে এলাহীকে চিনে। ফজলে এলাহী তো পালিয়ে বেড়ানোর মানুষ নয়। তবুও কেন তাকে গ্রেপ্তার করে হেনস্তা করা হলো?
বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে বলেন, অবিলম্বে এই আইন বাতিল করতে হবে। ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর কন্যা নাজনীন আনোয়ারের একটি রেস্টুরেন্টের লিজ সংক্রান্ত অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ সংক্রান্ত ফজলে এলাহী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন তারা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।