সংঘাতমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সকল ধর্মের মানুষের ঐক্য প্রয়োজন
বাংলাদেশে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা ‘ত্বরিকা-ই-মাইজভাণ্ডারীয়া’র প্রতিষ্ঠাতা গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ১১৭তম ১০ মাঘ উরস শরিফ উদযাপনের অংশ হিসেবে তাঁর মহান অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শ প্রতিপালনে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ‘এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট’-এর গবেষণা ও প্রকাশনা উইং ‘মাইজভাণ্ডারী একাডেমি’র আয়োজনে ১০ম “আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন-২০২৩” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে’ এই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- “সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতে অন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব”। সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় একই মঞ্চে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুরা উপস্থিত হয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, সংঘাতমুক্ত সমাজ বির্নিমাণে সকল ধর্মের মানুষের ঐক্য প্রয়োজন। পৃথিবীর সব ধর্মই পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতিশীল হওয়া, অন্যের ধর্মকে ঘৃণা না করা ও আত্মসংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। ধর্ম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম।
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন ২০২৩ সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং সম্মিলনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন কমিটির সদস্য বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রী শ্রী পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ, পাথরঘাটা আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার বিএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বশান্তি প্যাগোডার অধ্যক্ষ ড. জ্ঞান রত্ন মহাথেরো, চকবাজার শিখ টেম্পল এস্টেটের মোহন্ত ও সেবায়েত শ্রী গৌরাঙ্গ সিং।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর। ম্যানেজিং ট্রাস্টির বাণী পাঠ করেন শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক জহুর উল আলম। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাদরাসা-এ-গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর শিক্ষার্থী হাফেজ মো. জোনাইদ হাসান, গীতা থেকে পাঠ করেন পন্ডিত নিরোধ লীলা গীতা বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী নবান্ন ভট্টাচার্য্য, ত্রিপিটক পাঠ করেন অনিক বড়ুয়া, বাইবেল পাঠ করেন খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সমন্বয়কারী এমরোজ গোমেজ, গুরুগ্রন্থ শাহেব থেকে পাঠ করেন চকবাজার শিখ টেম্পল এস্টেটের রিপন সিং, ফার্স্ট ইয়ংগেস্ট মুসলিম ফিমেল সলো ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলার কাজী আসমা আজমেরী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মাস্টার, সদস্য অধ্যাপক মীর তরিকুল আলম, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, ডা. বরুন কুমার আচার্য বলাই, মো. রায়হান উদ্দিন, আবু সালেহ সুমন, শ্যামল নন্দী, সৈয়দ মুহাম্মদ শরফ উদ্দীন রাসেল।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বুকে বর্তমানে মানুষে মানুষে বহুমুখী বিভাজনের সূত্র ধরে অনৈক্য, পারষ্পরিক দ্বন্ধ-কোন্দল, হিংসা বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা আমাদের জন্মগত ঐক্য সূত্র ভুলে যেতে বসেছি। পরিহার করে চলেছি মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে মহান সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুকম্পা। এ কারণে মানুষ পৃথিবীতে বিচরণকালে বিভেদ প্রিয় সংঘর্ষমুখী এবং পারষ্পরিক স্নাত হতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। মানবজাতির এই ধরণের কলহ প্রবণতা স্রষ্টার নির্দেশিত নীতি ও কৌশলের সুষ্পষ্ট সীমালংঘন। ঋগবেদ, শ্রীমদভগবতগীতা, বাইবেল, কোরানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কথা বলা আছে। তাছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশের বড় বড় দার্শনিকরাও এর গুরুত্ব দেখিয়েছেন। ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে যুবসমাজের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।