চীনের নিম্নমানের সামরিক সরঞ্জামে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২; সময়: ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ |

দীর্ঘ সময় ধরে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রধান প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে চীন। দেশটি এশিয়ায় সামরিক সরঞ্জামকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থাৎ এর মধ্যদিয়ে চীন কিছু দেশকে সামরিকভাবে তার প্রতি নির্ভরশীল করতে চাইছে। কিন্তু একটি মিডিয়া রিপোর্টের সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের তুলনায় নিম্নমানের সরঞ্জাম উৎপাদন করায় চীনের এ প্রকল্পটি দুর্বল বলেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সম্প্রতি, যথাযথ পরীক্ষা না করার অভিযোগ তুলে চীন নর্থ ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (নরনিকো) এর ট্যাংক গোলাবারুদ সরবরাহের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চীন থেকে প্রাপ্ত সামরিক সরঞ্জামের মান নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্ট দেশটি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, ঢাকা চীনাদের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ চীন পশ্চিমাদের তুলনায় সুবিধাজনক দাম দিচ্ছিল। এই কারণেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নরিনকোর উৎপাদিত (বেশিরভাগই নকল) হালকা অস্ত্র, যেমন কামান এবং সাঁজোয়া যানগুলি ক্রয় করেছিল বলে বাংলাদেশ লাইভ নিউজ রোমান নিউজ পোর্টাল ডিফেসা অনলাইনকে জানায়।

বাংলাদেশ সরকার সাঁজোয়া কম্পোনেন্টের জন্য একটি উন্নত প্রকল্প পরিচালনা করছে এবং সেজন্যে ২০১১-২০২০ সালে চীন থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেছে বাংলাদেশ সরকার।

২০১১ সালে টাইপ ৯০-আইআইএম ট্যাংক থেকে শুরু করে নরিনকোর নির্মিত চীনা এমবিটি-২০০ ও ১৭০ মডেলের ট্যাংককে টাইপ ৫৯ জি তে উন্নীত করেছে। যদিও সম্প্রতি তারা টাইপ ৬৯ ফ্লিটকে উন্নীত করে ৬৯ আইআইজিতে রূপান্তর করেছে।

কামান আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চীনা যন্ত্রাংশগুলোর পরিবর্তে ১৫৫/৫২ মি.মি. সার্বিয়ান স্বচালিত রটার নোরা বি-৫২ অর্জন করে।

বেইজিং বাংলাদেশে একটি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহন (এমআরও) কেন্দ্র ও সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনে কাজ করছে।

কক্সবাজার জেলার মগনামা গ্রামে অবস্থিত নৌঘাঁটিটি কৌশলগত দিক দিয়ে সর্বোত্তম কারণ এটি কুতুবদিয়া খাল পেরিয়ে পেকুয়া উপজেলায় মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭০কিমি দূরে অবস্থিত। নিউজ পোর্টালটির মতে, সম্ভবত এই কারণেই চীনা মিং ক্লাসের দুইটি সাবমেরিন (টাইপ ০৩৫ জি) ক্রয় করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

এছাড়াও নিউজ পোর্টাল অনুযায়ী, সম্প্রতি বাংলাদেশকে এইচকিউ স্বল্প পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল বিষয়ক কিছু সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে চায়না প্রিসিশন মেশিনারি ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিপিএমআইইসি)।

বাংলাদেশ লাইভ নিউজ অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ইঞ্জিন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইনফ্রারেড নির্দেশিকা ডিভাইসসহ যানবাহন ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।

চায়না শিপবিল্ডিং ও অফসোর ইন্টারন্যাশনালের দেয়া রাডারগুলো নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

পূর্বে ২০২১ সালের একটি র‍্যান্ড কর্পোরেশন (ইউএস ভিত্তিক থিংকট্যাংক) এর সমীক্ষায় চীনা প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়।

চীনের অস্ত্র বিক্রয় প্রধানত রাষ্ট্র চালিত রপ্তানিমূলক সংস্থা যেমনঃ চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (এভিক) এবং নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (নরিনকো) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

অস্ত্র হস্তান্তরও চীনের বৈদেশিক নীতির একটি অংশ, যা চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৈদেশিক নীতির উদ্যোগের পরিপূরক হিসেবে অন্যান্যদের সাথে একত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিক্রয়োত্তর সহযোগিতা ও আমদানিকৃত সরঞ্জামগুলোর দ্রুত অকার্যকর যন্ত্রপাতিতে পরিণত হওয়ার কারণে অনেক দেশেরই চীনা কোম্পানিদের উপর বিশ্বাসহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

রাশিয়ান কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, চীন এখনো প্রথম সারির উন্নয়নকারী ও অত্যাধুনিক সামরিক সামগ্রীর উৎপাদনকারী হিসেবে বিবেচিত নয় এবং সেজন্য চীনের দক্ষতাসম্পন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষমতাও নেই।

যদিও কিছু গ্রাহক বেইজিংয়ের তৈরি অস্ত্রগুলোকে নিম্নমানের এবং নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন। অনেক উন্নয়নশীল দেশ চীনের অস্ত্র ক্রয় করে থাকেন কারণ এটি তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল।

বিশ্বজুড়ে অস্ত্রবিক্রি এবং উপস্থিতির ক্ষেত্র তৈরিতে বেইজিংয়ের দৃঢ় নীতিতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চীন শুধুমাত্র অস্ত্র বিক্রিই বাড়াচ্ছে না বরং ঋণদাতা দেশগুলোতে সামরিক প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগও বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আফ্রিকা চীন থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্রেতা। পাকিস্তানের কাছে চীন ৩৬ জে- ১০সি ফাইটার্স জেট বিমান বিক্রি করেছে এবং সার্বিয়াকে এইচকিউ-২২ (এফকে-৩) সারফেস টু এয়ার মিসাইল (স্যাম) দিয়েছে।

চীনা অস্ত্রের শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তানজানিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান, ক্যামেরুন, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, গ্যাবন, আলজেরিয়া, নামিবিয়া, ঘানা এবং ইথিওপিয়ার মতো দেশসমূহ।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপারি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেক চীনা রপ্তানি অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৪৭% হয়েছে তার নিকটতম মিত্রদেশ পাকিস্তানে, যেখানে বেইজিংয়ের অন্য দুই বৃহৎ ক্রেতা হলো বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড, যেখানে ক্রমান্বয়ে মোট রপ্তানির ১৬% এবং ৫% রপ্তানি হয়েছে।

অস্ত্র রপ্তানির তালিকায় চীনের অবস্থানের আপেক্ষিকতায় এটি সম্ভবত আশ্চর্যজনক যে, ভারত, সৌদি আরব, মিশর এবং অস্ট্রেলিয়ার পরে অস্ত্র আমদানিকারকদের আন্তর্জাতিক তালিকায় চীনের অবস্থান পঞ্চম।

ডিজাইন ও কারিগরি: চট্টগ্রাম লাইভ
উপরে